ঢাকা , শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ , ৯ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

​সক্ষমতার চেয়ে কম উৎপাদন

আমদানি নির্ভরতায় অলস পায়রার তিন বিদ্যুৎকেন্দ্র

ডেস্ক রিপোর্ট
আপলোড সময় : ০৮-১২-২০২৪ ০৫:১৬:৪৪ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০৮-১২-২০২৪ ০৫:১৬:৪৪ অপরাহ্ন
আমদানি নির্ভরতায় অলস পায়রার তিন বিদ্যুৎকেন্দ্র ​ফাইল ফটো
পায়রা তীরের কয়লাভিত্তিক তিনটি তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্মিলিত উৎপাদন সক্ষমতা ২,২৮৭ মেগাওয়াট। কিন্তু জ্বালানি আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংকটে দুটি কেন্দ্র উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে মাত্র ৬২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। যদিও বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ কমানোর পরিকল্পনায় আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির এই কেন্দ্রগুলো স্থাপন করা হয়েছিল, তবুও পরিকল্পনার অভাব ও জ্বালানি খাতে অতিরিক্ত আমদানিনির্ভরতার কারণে পায়রা তীরের এই কেন্দ্রগুলো কার্যত অলস হয়ে যাচ্ছে।
জ্বালানি সংকটের কারণে ৩০৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার বরিশাল ইলেকট্রিক পাওয়ারের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি প্রায় এক মাস ধরে বন্ধ। এদিকে ১,৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ২ নম্বর ইউনিট রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। বর্তমানে এই কেন্দ্রের ১ নম্বর ইউনিট থেকে উৎপাদিত ৬২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। পায়রার পাশেই স্থাপিত পটুয়াখালী ১,৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত থাকলেও সঞ্চালন সংক্রান্ত জটিলতায় অন্তত চার মাস পিছিয়েছে।
৬২২ মেগাওয়াট উৎপাদন চালু পায়রায়
দক্ষিণাঞ্চলের প্রথম কয়লাভিত্তিক ১,৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০২০ সালে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে। দেশের বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে এই কেন্দ্রের দুটি ইউনিট দীর্ঘ সময় ধরে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন করে আসছিল। তবে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী যন্ত্রপাতি বিরাম, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের জন্য বর্তমানে কেন্দ্রটির ২ নম্বর ইউনিট বন্ধ রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি অনুযায়ী গত ১০ নভেম্বর রাত থেকে এই ইউনিট বন্ধ রাখা হয়েছে।
রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দুই মাস সময় লাগবে। বর্তমানে কেন্দ্রটির ১ নম্বর ইউনিট থেকে উৎপাদিত ৬২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। এর আগে গত জানুয়ারিতে ১ নম্বর ইউনিটের রক্ষণাবেক্ষণ কাজ সম্পন্ন হয়েছিল।
পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জোবায়ের আহমেদ বলেন, শীত মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাওয়ায় কেন্দ্রের একটি ইউনিট বন্ধ রাখা হয়েছে। চীনের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী এ রক্ষণাবেক্ষণ কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে, ফলে বাড়তি কোনো খরচ হবে না। আগামী দুই মাসের মধ্যে মেরামত শেষ করে বন্ধ ইউনিটটি আবার উৎপাদনে ফিরবে।
নির্মাণাধীন নতুন কেন্দ্র এবং সম্ভাবনা
পায়রা তীরের কাছে ১,৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল)। এই কেন্দ্রটির কাজের অগ্রগতি প্রায় ২০ শতাংশ। কেন্দ্রটি উৎপাদনে এলে পায়রার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে হবে ৪,২৬৭ মেগাওয়াট। এটি দেশের মোট কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রায় অর্ধেক। তবে এই বৃহৎ সক্ষমতাগুলো সম্পূর্ণরূপে কাজে লাগাতে পরিকল্পনা ও জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন জরুরি বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
কয়লা সংকটে বন্ধ বরিশাল বিদ্যুৎকেন্দ্র
জ্বালানি সংকটে ৩০৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার বরিশাল ইলেকট্রিক পাওয়ার বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে পড়েছে। বরগুনার তালতলীর পায়রা নদীর তীরে অবস্থিত এই বেসরকারি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গত ২৭ অক্টোবর থেকে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় বন্ধ রয়েছে। কেন্দ্রটির উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান আইসোটেক ইলেকট্রিফিকেশন কোম্পানি লিমিটেড জানিয়েছে, কয়লা সংকটের কারণেই তাদের উৎপাদন স্থগিত রয়েছে।
চীনের ‘পাওয়ার চায়না রিসোর্স লিমিটেড’ এবং বাংলাদেশের আইসোটেক গ্রুপের যৌথ উদ্যোগে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়। প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই প্রকল্পটি ‘বরিশাল ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড’ নামে পরিচালিত হয়ে আসছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ বাড়াচ্ছে রাবনাবাদ চ্যানেলের সংকট
পায়রা নদীর তীরে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর কয়লা সরবরাহে ব্যবহৃত রাবনাবাদ চ্যানেলের গভীরতা সংকট তৈরি করেছে। নাব্য সংকটের কারণে মাদার ভেসেলগুলো চ্যানেলে নোঙর করতে পারছে না। ফলে লাইটারেজের মাধ্যমে কয়লা পরিবহনে অতিরিক্ত ৭-৮ ডলার খরচ হচ্ছে প্রতি টনে।
পটুয়াখালী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক শাহ আব্দুল মাওলা জানান, চ্যানেলের নাব্যতা সংকট অবিলম্বে সমাধান করা না হলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে কয়লা সরবরাহে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে শীত মৌসুমে সংকট আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
রাবনাবাদ চ্যানেলের ড্রেজিং সম্পর্কে জানতে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বাংলাস্কুপ/ডেস্ক/এনআইএন/এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ